বড়লেখায় কাগজে- বাঁশে শহীদ মিনার বানিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা নিবেদন

আশফাক জুনেদ,বড়লেখাঃ
বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার ৬৮ বছর পার হলেও মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী বড়লেখা উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেই কোনো শহীদ মিনার। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও বিজয় দিবসসহ অন্যান্য সব দিবসে দূরে গিয়ে অন্য জায়গায় শহীদ মিনারে ফুল দিতে হয় শিক্ষার্থীদের।প্রত্যন্ত এই উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। আর এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিজ বিদ্যালয়ে জাতীয় সব দিবস পালন থেকে বঞ্চিত থাকছে।

তবে নিজস্ব শহীদ মিনার না থাকলেও ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বড় সাদা আর্ট পেপারে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান লিখে এবং শহীদ মিনারের ছবি সম্বলিত পোস্টার বাঁশের সঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে চমৎকার এক অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে। পরে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় উপজেলার শাহবাজপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুল নামের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

রবিবার সকালে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে উপজেলার শাহবাজপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে ব্যতিক্রমী এই শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ রুহেল এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর ২৫ বছর থেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক এবং ২৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে অনেক শিক্ষার্থী নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অনেকে ডাক্তার উকিল হয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে নিজস্ব কোনো শহীদ মিনার নেই। নানা জটিলতায় নিজস্ব শহীদ মিনার তৈরি করতে পারেনি বেসরকারি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর পার্শবর্তী শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে প্রতিবারের মতো এবারে আর শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ফুল দিতে যায়নি শিক্ষার্থীরা।
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে তৈরি করেন এক ব্যতিক্রমী শহীদ মিনার। কাগজ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। ব্যতিক্রমী এই শহীদ মিনারে ফুল দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শাহবাজপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিনা জাহান ফাহমি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর আমরা শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিতে হয়। এ বছর করোনার কারণে আমরা সেখানে যাইনি। আমাদের স্যারদের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। নিজ বিদ্যালয়ে প্রতীকি শহীদ মিনারে ফুল দিতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ রুহেল বলেন, প্রতি বছর আমরা শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিই। এবার মহামারী করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। আর্ট পেপারে অঙ্কন করে সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে ফুল দিয়ে দিবসটি পালন করেছি। ইনশাআল্লাহ সামনের বছরের মধ্যে নিজস্ব শহীদ মিনার তৈরি করতে পারবো। ইতিমধ্যে শহীদ মিনার তৈরির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বলেন, কোমলমতি শিশুরা নিজেরা কাগজ-বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এটা নিসন্দেহে ভালো খবর। তাদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে অন্যরাও উৎসাহ পাবে।

এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে শহীদ মিনার তৈরি করে দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমানে উপজেলার সরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সরকারি বরাদ্দ এলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শহীদ মিনার তৈরি করে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, করোনাকালে এর আগেও শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য শাহবাজপুর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছেন। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের জন্য বিদ্যালয়টি উপজেলাজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।